Skip to main content
 

ঢাকা মহানগর দায়রা বিভাগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 

ঢাকার নামকরণ ও ইতিহাস

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এর একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাক্-মুসলিম আমলে ঢাকার বিষয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা দুরূহ। তবে সূত্র অনুসারে বলা যায় যে, সুলতানি আমলে এটি একটি নগর কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এবং মুগল আমলে প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার পর এটি প্রসিদ্ধি লাভ করে।  ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে প্রচলিত মতগুলির মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ: (ক) এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফ্রনডোসা) ছিল এবং উক্ত গাছের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম ঢাকা হয়। (খ) গুপ্তাবস্থায় থাকা দুর্গা দেবীকে (ঢাকা-ঈশ্বরী) এ স্থানে পাওয়া যায় বিধায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নামানুসারে এ স্থানের নাম ঢাকা রাখা হয়। (গ) রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানের নির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল; (ঘ) ঢাকা ভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল; (ঙ) রাজতরঙ্গিণী-গ্রন্থে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ  শিলালিপিতে উল্লিখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা। ঢাকা ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৭৭২ সাল থেকেই ঢাকা একটি জেলা প্রশাসনের কেন্দ্র ছিল। ১৮২৯ সালে নগর ঢাকা ঢাকা বিভাগ নামে একটি বৃহৎ বিভাগের সদর দফতরে পরিণত হয়। ১৮৬৪ সালে ঢাকা মিউনিসিপালিটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬০ সালে উহা টাউন কমিটিতে পরিণত হয়।  ঢাকা টাউন ১৯৯০ সালে সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হয়। ৫২টি মহানগর থানা নিয়ে ঢাকা মহানগর গঠিত। ঢাকা মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ইতিহাস

ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য গত ০৭.০১.১৯৯৯ ইং তারিখে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম মহানগর দায়রা জজ আদালত। প্রথম মহানগর দায়রা জজ ছিলেন জনাব শেখ রেজোয়ান আলী। এর আগে ঢাকা জেলার সকল দায়রা মামলার বিচার ঢাকা দায়রা জজ আদালতে অনুষ্ঠিত হতো। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়  এ দায়রা বিভাগে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাসায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল বিপথগামী সদস্য একজন সাধারন নাগরিকের সুবিচার নিশ্চিতের কথা বাংলাদেশের সুপ্রিম আইন সংবিধানে বলা হলেও স্বয়ং জাতির জনক সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সুবিচার নিশ্চিতকরনের জন্য দীর্ঘ ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি এড়াবার ব্যবস্থা প্রদানের জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন হত্যাকান্ডের পরে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আইন প্রনয়নের মাধ্যমে বিচারের পথকে বন্ধ করে দেওয়ার মানসিকতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দায়মুক্তি আইন বা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন১৯৯৬ সালের অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম এজাহারকারী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ধানমন্ডি থানার মামলা নং-১০(১০)৯৬ দায়ের করেন মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত কর্তৃক আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হয়। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে মামলাটি বিচারের জন্য বিজ্ঞ  জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। অতঃপর, জেলা দায়রা জজ, ঢাকা কাজী গোলাম রসুল ১৫১ কার্যদিবসে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে ১৯৯৮ সালের নভেম্বর ১৯ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে রায় কার্যকরের আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঢাকা মহানগরের সকল দায়রা মামলা এ আদালতে বদলী করা হয়। বর্তমানে এ আদালতে মহানগর দায়রা জজ সহ ১৬ টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং ৭ টি যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত রয়েছে। এছাড়াও এ আদালতে মহাফেজখানা, অনুলিপি বিভাগ, লাইব্রেরি বিভাগ, হিসাব বিভাগ, ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারী বিভাগ ও নেজারত বিভাগ রয়েছে।

 

ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ইতিহাস

১৯৭৬ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশের সূচনা হওয়ার পর ঢাকা মহানগরের জন্য একটি পৃথক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি স্থাপনের বিধান রেখে দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর সংশোধন করা হয়, যাহা ১৯৭৯ সালে কার্যকর হয়। এরপর ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে নির্বাহী বিভাগ হতে ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হওয়ার পর গত ০১.১১.২০০৭ ইং তারিখ থেকে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার কাজ পরিচালনা করে আসছেন। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের মধ্যে প্রথম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হলেন জনাব এ. কে. এম এনামুল হক। এটি বাংলাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ চীফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি।  বর্তমানে এ ম্যাজিস্ট্রেসিতে একটি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৪টি অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩২টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ১০ টি স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। এছাড়াও এ আদালতে মহাফেজখানা, অনুলিপি বিভাগ, লাইব্রেরি বিভাগ, হিসাব বিভাগ, ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারী বিভাগ, নেজারত বিভাগ,  মালখানা  ও জুডিসিয়াল মু্ন্সীখানা রয়েছে।

  

আদালতের অবকাঠামো

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতটি ৬তলা বিশিষ্ট একটি ভবন। উক্ত ভবনটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এবং ঢাকা জেলা জজ আদালত ভবনের দক্ষিণ পাশে এক নান্দনিক পরিবেশে অবস্থিত। এ ভবনে এবং পাশের একটি টিনশেডে এ আদালতের বিচার কাজ চলছে। মহানগর দায়রা জজ এর নিয়ন্ত্রণাধীন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১০ তলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টি নন্দন ভবন। উক্ত ভবনটি ঢাকা  জনসন রোডে অবস্থিত।

 

সম্পাদনায়

মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা

সহযোগীতায়:

মো: আফতাবুজ্জামান, যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা

মাহবুব আহমেদ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা

মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা